সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি আর জীবনে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে ব্যতিক্রর্মী উদ্যোগ ‘মজার ইশকুল’। অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো এখানে নিয়মকানুনের কড়াকড়ি নেই। বই পড়ার পাশাপাশি চলে গান, ছবি আঁকা, খেলাধুলা আর জীবনঘনিষ্ঠ পাঠ। উদ্দেশ্য একটাই—মজার ছলে শিক্ষার মাধ্যমে পথশিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো।
২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তরুণ আরিয়ান আরিফ। স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ঢাকার পথশিশুদের জন্য একটি স্কুল শুরু করতে চান তিনি। মাত্র তিন দিন পর ১০ জানুয়ারি বাংলা একাডেমির সামনে ১৩ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে যাত্রা শুরু করে ‘মজার ইশকুল’। স্লোগান ছিল—‘লিখতে চাই শুধু শিশু, মুছে দিতে চাই পথশিশু’।
বর্তমানে মজার ইশকুলের নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই হাজার তিন শর বেশি। আর সারা দেশে নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন প্রায় সাত হাজার। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে একটি স্থায়ী স্কুল এবং সদরঘাট, কমলাপুর ও শাহবাগে অনানুষ্ঠানিক স্কুল পরিচালনা করা হচ্ছে। আগারগাঁওয়ে সপ্তাহে পাঁচ দিন এবং অন্য তিন স্থানে সপ্তাহে এক দিন ক্লাস হয়।
মজার ইশকুল এখন কাজ করছে খাদ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি—তিনটি বিষয় নিয়ে। লাল-সবুজ রঙের টি-শার্ট পরা স্বেচ্ছাসেবী তরুণ-তরুণীরা পথশিশুদের শেখাচ্ছেন অক্ষরজ্ঞান, ছবি আঁকা, বর্ণপরিচয়, সাক্ষরতা, জাতীয় সংগীতসহ অনেক কিছু। নানা ধরনের নেশায় আসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্লাস শেষে বিনা মূল্যে খাবার পাচ্ছে শিশুরা। আগারগাঁও শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সীমিত পরিসরে প্রযুক্তিজ্ঞান অর্জনের সুযোগ।
আরিয়ান আরিফের উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রায় এক একর জমির ওপর পরিচালিত হচ্ছে আবাসিক ভিলেজ। আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। জাকাত ফান্ডের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ২৩৬টি পরিবারকে স্বাবলম্বী করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে পথশিশুমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একটি টেকসই ইকোসিস্টেম বিনির্মাণে মজার ইশকুল ১৩ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
মজার ইশকুলের সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুরাও এখন স্বপ্ন দেখে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা উদ্যোক্তা হওয়ার। স্বপ্ন দেখে জীবন বদলানোর। অনেকের কাছে বিলাসিতা মনে হলেও ছোট্ট সেই স্বপ্নগুলোই বদলে দিচ্ছে তাদের জীবন, জাগিয়ে তুলছে মানবতা ও সভ্যতার আলো। আর তাদের স্বপ্ন পূরণের সঙ্গী হয়ে পাশে আছেন আরিয়ান আরিফের মতো হৃদয়বান তরুণেরা।