Inspiring Ten Winner Banner
/winners/banner/রায়হান-রাফী.png

আড়ালের ‘আজব বাক্স’ থেকে সাফল্যের আলোয়

দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলো ভুগছিল দর্শকখরায়। নির্মল বিনোদনমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন অনেক নির্মাতাই। কিন্তু কিছুতেই দর্শকদের প্রত্যাশিত মাত্রায় প্রেক্ষাগৃহমুখী করা যায়নি। ২০১৮ সালে একজন তরুণ স্বপ্ন এবং আত্মবিশ্বাসের রথে চড়ে এলেন। জয় করলেন লক্ষ–কোটি দর্শকের হৃদয়।

নির্মাতা রায়হান রাফী এখন ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত ও সফল একটি নাম। পোড়ামন–২, পরাণ, সুড়ঙ্গ, তুফান থেকে শুরু করে সর্বশেষ তাণ্ডব—তাঁর নির্মিত সব সিনেমাই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে দর্শকের মধ্যে। বিশেষ করে তুফান মুক্তির পর রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছিল। হলে হলে দর্শকের ভিড়, টিকিট নিয়ে হাহাকার, সপ্তাহের পর সপ্তাহ হাউসফুল শো আর কোটি কোটি টাকার ব্যবসা—সব মিলিয়ে ঢাকাই সিনেমায় দেখা দিল প্রাণচাঞ্চল্য।

স্বপ্নবান তরুণ পরিচালক রায়হান রাফীর জন্ম সিলেটে। শৈশবে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন, জীবনের দীর্ঘ সময় কেটেছে মাদ্রাসার হোস্টেলে। চারপাশে ছিল নানা প্রতিকূলতার দেয়াল। তবু ছোটবেলা থেকেই সিনেমার প্রতি ছিল তাঁর অদম্য টান। শিশু বয়সেই মনের ভেতরে পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন চুপিসারে বাসা বেঁধেছিল। প্রতিকূলতা সঙ্গী হলেও থেমে থাকেননি রাফী। একাগ্রতা ও দৃঢ়প্রত্যয়ে এগিয়ে গেছেন স্বপ্নপূরণের পথে। বর্তমানে তিনি দেশের অন্যতম আলোচিত তরুণ নির্মাতা।

তবে এই সাফল্যের পথটা সহজ ছিল না। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানানোর স্বপ্নে মগ্ন হয়ে পড়েন রাফী। নিজের সোনার চেইন বিক্রি করে মা ১২ হাজার টাকা তুলে দেন রাফীর হাতে। সেই অর্থে নির্মিত হয় তাঁর প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আজব বাক্স। তারপর স্বল্পদৈর্ঘ্য থেকে পূর্ণদৈর্ঘ্য—সব মাঠেই সাফল্যের ফুল ফুটিয়ে যাচ্ছেন তিনি। জিতে নিচ্ছেন দর্শক ও সমালোচকদের হৃদয়। স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। চলচ্চিত্রে একের পর এক ভিন্নধর্মী কাজের মধ্য দিয়ে অসাধারণ দক্ষতায় রাফী দেখিয়ে চলেছেন তাঁর প্রতিভার ঝলক।

ত্যাগ, পরিশ্রম, অবিরাম চেষ্টা, দৃঢ়তা, সততা, সাহসিকতা আর পরিবর্তনের প্রবল আকাঙ্ক্ষা—সব গুণই যেন একসঙ্গে এসে মিশেছে রাফীর ভেতর। ফলে প্রতিটি কাজেই নিজেকে যেমন ভেঙেচুরে নতুন করে প্রমাণ দিচ্ছেন, তেমনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকেও নতুন রূপে উপস্থাপন করছেন বিশ্বমঞ্চে।