গায়রা—টাঙ্গাইলের মধুপুরের প্রত্যন্ত এই গারো গ্রামে তখনো পৌঁছায়নি প্রযুক্তির আলো। বনাঞ্চলঘেরা এ এলাকায় চলাচলের রাস্তাই ঠিকঠাক নেই, ইন্টারনেটের গতি তো আরও দূরের কথা। অথচ সেখান থেকেই দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন সুবীর নকরেক। একজন আদিবাসী তরুণ হিসেবে তিনি প্রমাণ করেছেন, রাজধানী ঢাকা নয়, বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকেই বিশ্বমানের ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
সুবীর নকরেকের উদ্যোগের নাম ‘নকরেক আইটি ইনস্টিটিউট’। ৯ বছরের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় তিনি ৩২টি দেশের ২ লাখের বেশি তরুণকে বিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং–বিষয়ক অনলাইন প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলেছেন দক্ষ আইটি কর্মী হিসেবে।
কেবল অনলাইনে নয়, তিনি দেশের ১০টি জেলায় শাখা খুলে বেকার তরুণদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করছেন। এর সুফল মিলছে প্রত্যন্ত জনপদেও। বনাঞ্চলের মধ্যে যেখানে একসময় ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না, সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন সাড়ে তিন শতাধিক সফল ফ্রিল্যান্সার।
সুবীরের নিরলস প্রচেষ্টার খবর নিয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পরপর গায়রা গ্রামে প্রথমবারের মতো ফোর–জি নেটওয়ার্ক স্থাপন করে গ্রামীণফোন। এরই ধারাবাহিকতায় রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের মতো পার্বত্য এলাকার জন্যও খুলেছে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। সেসব এলাকায় এখন পাহাড়ে বসেই তরুণ-তরুণীরা ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে অনেকেই আগে তথ্যপ্রযুক্তির ক্যারিয়ার সম্পর্কে জানতেন না। সুবীর নকরেকের হাত ধরে অন্তত ৩০টি জাতিগোষ্ঠীসহ প্রায় ১০ হাজার তরুণ এখন আইটি খাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্লোবাল মার্কেটে কাজ করছেন। দেশের জিডিপিতে বৈদেশিক মুদ্রা আনার ক্ষেত্রেও তাঁদের রয়েছে অনন্য অবদান। এ ছাড়া বিশেষভাবে সক্ষমদের (প্রতিবন্ধীদের) জন্য অনলাইনে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা করেছেন সুবীর নকরেক। আজ সুবীর নকরেক শুধু একজন সফল উদ্যোক্তাই নন, তিনি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণাও বটে।