Inspiring Ten Winner Banner
/winners/banner/মো.-তাসনিমুল-হাসান-তাওহীদ.png

‘ফিলাইট’ ব্যবহারে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় কমছে মৎস্যচাষিদের

‘ফিলাইট’ ব্যবহারে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় কমছে মৎস্যচাষিদের একটি ছোট্ট বাতি, কিন্তু সম্ভাবনার আলো অফুরন্ত। প্রথম দেখায় এটিকে অনেকের কাছে সাধারণ ‘ভাসমান বাতি’ বলে মনে হবে। কিন্তু এর ভেতর লুকিয়ে আছে কৃষি ও পরিবেশের জন্য অপার সম্ভাবনা। পুকুর বা জলাশয়ে স্থাপিত বাতিটি রাতে আলো জ্বেলে আকর্ষণ করে ক্ষতিকর পোকামাকড়। সেই পোকাগুলো পানিতে পড়ে যায়। পুকুরের মাছ পায় প্রাকৃতিক খাদ্য। ফলে মাছচাষিদের ব্যয়বহুল খাবারের ওপর নির্ভরতা কমে যায় অনেকাংশে।

‘ফিলাইট’ নামের অভিনব প্রযুক্তির এই বাতির উদ্ভাবক মো. তাসনিমুল হাসান তাওহীদ। মাত্র ২০ বছর বয়সী এই তরুণের রয়েছে নিজের স্টার্টআপ ‘বর্তনী’। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাসনিমুলের যাত্রা শুরু হয়েছিল সাধারণ এক প্রশ্ন থেকে—কৃষি ও মৎস্য চাষকে সহজ করার পাশাপাশি কীভাবে পরিবেশও সুরক্ষিত রাখা যায়?

ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান আর উদ্ভাবনী চিন্তায় ঝোঁক ছিল তাসনিমুলের। রোবোটিকস ও ইলেকট্রনিকস বিষয়ে ছিল প্রবল আগ্রহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে দেখেছেন, মাছচাষিদের সবচেয়ে বড় চাপ হলো মাছের খাদ্যের খরচের জোগান দেওয়া।

বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে তাঁকে। কীভাবে এর একটি টেকসই সমাধান বের করা যায়, সেই ভাবনা থেকেই তৈরি করেন ফিলাইট। পুরোপুরি সৌরশক্তিচালিত এ ডিভাইস চলে বিদ্যুৎ ছাড়াই, যা গ্রামীণ মৎস্যচাষিদের দেখাচ্ছে আশার আলো। উদ্ভাবনটি ইতিমধ্যে পেটেন্টের আবেদনাধীন। অর্থাৎ এটি দেশের নিজস্ব মৌলিক প্রযুক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় আছে।

ইতিমধ্যে দেশের ৬টি জেলায় ৮৪টি পুকুরে সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে ফিলাইট। এতে মাছের খাদ্য–ব্যয় কমেছে গড়ে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। শুধু তা–ই নয়, এর ফলে মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হচ্ছে দ্রুততর এবং কোনো রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই পরিবেশ থাকছে সুরক্ষিত।

তাসনিমুলের স্বপ্ন এখানেই থেমে নেই। ২০৩০ সালের মধ্যে এক লাখের বেশি মাছচাষি ও উদ্যোক্তার কাছে ফিলাইট পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন তিনি। তাসনিমুল বিশ্বাস করেন, উদ্ভাবনী ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিই বাংলাদেশকে কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তায় আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে।

তাসনিমুল শুধু একজন উদ্ভাবকই নন, তরুণদের জন্য প্রেরণাও বটে। তিনি প্রমাণ করেছেন, বড় কিছু করতে সব সময় বিশাল পরিকাঠামোর দরকার হয় না। প্রয়োজন শুধু সৃজনশীলতা, দৃঢ়তা আর সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধান খুঁজে নেওয়ার সাহস।